আজ ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

অন্যায়ের প্রতিবাদ অপবাদের শিকার আব্দুর রহিম চৌধুরী


চন্দনাইশ প্রতিনিধি

অন্যায়ের প্রতিবাদ ও ভুল সিদ্ধান্তের সংশোধন করে অপবাদ অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও বরকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহিম চৌধুরী। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ‘তিনি অতীতে আ. লীগের কর্মী ছিলেন না, ছিলেন জামায়াত-শিবিরের কর্মী এবং টাকার বিনিময়ে তিনি আ. লীগের পদ হরন করেছেন, ভোটে লড়েছেন নৌকার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ এনে তার পদ প্রত্যাহার করার জন্য সম্প্রতি আ.লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাংসদ ওয়াসিকা আয়েশা খানের কাছে দরখাস্থ দিয়েছেন আবদুর রহিমের বিরোধী পক্ষ। বিষয়টি জানতে পেরে দরখাস্থকারীদের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছেন চন্দনাইশের (সাতকানিয়া আংশিক) সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এ বিষয়ে তিনি ওয়াসিকা আয়েশা খানকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে আলাপকালে চাটগাঁর সংবাদকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আবদুর রহিম চৌধুরী আওয়ামী পরিবারের সন্তান। বিষয়টি নিয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, চন্দনাইশের বরকলে ২০২২ সালে আওয়ামী লীগের মনোয়নের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য ভোটে লড়ে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন আবদুর রহিম চৌধুরী। ওইসময় আ.লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন চন্দনাইশ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফেরদাউসুল আলম আর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি’র (এলডিপি) পক্ষে ভোটে লড়ছিলেন নাছির উদ্দীন। এলাকার অন্যান্য শীর্ষ নেতারা এবং সংশ্লিষ্ট ভোটাররা তখন রহিম চৌধুরীকে জানালেন, যেহেতু তার জনসমর্থন বেশি রয়েছে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান পদটি রক্ষার্থে তাকে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচনে লড়তে হবে। অন্যথায় পদটি চলে যাবে এলডিপি’র দখলে। সেইমতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন নৌকা প্রতীক না পেলেও ভোটে লড়বেন। ভোটযুদ্ধে জিতলেনও তিনি। কিন্তু ঘটনার পর কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করা হচ্ছে। আ.লীগের তৃণমূলের নবীন নেতা-কর্মীদের মাঝে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একপক্ষ বলছে, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হওয়া মো. আবদুর রহিম চৌধুরী কখনও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করতেন। আরেক পক্ষ বলছে, আওয়ামী লীগের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এখন সুবিধাবাদীদের অপবাদের শিকার হচ্ছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে নৌকার পক্ষে সমর্থন থাকার কারণে আবদুর রহিম তৎকালে মালমা হামলার শিকার হন। কেবল তিনি নন তার পরিবারের অসংখ্য সদস্য যারা আওয়ামী পন্থী রাজনীতি করতো তারাও ওইসময় বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে যেসব অপবাদ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। তার রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিটির কারণে তাকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে এবং সমর্থনের কারণে তিনি বিদ্রোহী হয়েও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।’

বরকল ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘চেয়ারম্যান ইলেকশনের সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পুরস্কার পাওয়ার বদলে তার বিরুদ্ধে অপবাদ-অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ওইসময় সে যদি ভোটে অংশগ্রহন না করতো তাহলে পদটি এলডিপি প্রার্থীর দখলে চলে যেতো। কারণ আ.লীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত ফেরদাউসুল আলমের খুব একটা জনসমর্থন ছিলো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘১৯৯৬ সালে উপনির্বাচনে মমতাজ অলি’র বিপক্ষে এবং বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষে সমর্থন থাকায় একটি মামলার আসামী হয়েছিলেন তিনি। ওই মামলায় আমাকেসহ চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনিবার্হী সদস্য ও বরকল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মাস্টার এ কে এম নাজিম উদ্দীন (বিএসসি), বরকল ইউনিয়ন আ.লীগের সহ-সভাপতি সেলিম উদ্দীন চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি তৌহিদুল আলম, মরহুম সোলাইমান চৌধুরী, কৃষকলীগ নেতা নেজাম উদ্দীন চৌধুরীসহ অসংখ্য নেতা কর্মীকে আসামী করা হয়েছিলো। তাহলে চিন্তা করে দেখেন, ১৯৯৬ সালে মামলা হামলায় শিকার হওয়া একজন আওয়ামী কর্মীকে কেমনে জামায়াত নেতা বলে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’

তার প্রসঙ্গে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে চন্দনাইশ উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ চৌধুরী জুনু সম্প্রতি ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আবদুর রহিম চন্দনাইশ উপজেলা ছাত্রলীগের (আ.স.ম সাইফুদ্দিন খালেদ ও আবু আহমেদ জুনু প্যানেল) কার্য্য নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। সে নিরেট আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমি তার বিরুদ্ধে আনীত চিহ্নিত কুচক্রীমহলের মিথ্যা অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে মো. আবদুর রহিম চৌধুরী বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি দল আ. লীগের রাজনীতি করি আমি। একটা দলে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা থাকবে, প্রতিযোগী থাকবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু কোনো কারণে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী যদি নিজেদের মানুষ সম্পর্কে অপপ্রচার চালায় তাহলে সেক্ষেত্রে সে বা তারা আ.লীগের কতটুকু সমর্থন করে সেটাই এখন আমার প্রশ্ন। আমাকে জামায়াত-শিবির বলে কেন অপবাদ দেয়া হচ্ছে? সেটা যেমন খতিয়ে দেখা উচিত তেমনি যারা এসব অপবাদ-অপপ্রচারে লিপ্ত তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডও খুঁজে বের করা জরুরি।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর